আইনকানুন প্লেটোর লেখা সর্বশেষ ও দীর্ঘতম সংলাপ। এতে ক্লেইনিয়াস নামধারী একজন ক্রিটবাসী, মেগিল্লাস নামধারী একজন লাসেদাইমেনয়ীয় এবং একজন আথেনীয় আগন্তুক (মনে করা হয় প্লেটো নিজে) ক্রিট দ্বীপে ম্যাগ্নেসিয়া নামে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংলাপে বৃত হন। সেই লক্ষে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং তাঁর মুখে মুখে প্রয়োজনীয় আইন—(অনুবাদক ট্রেভর জে. স্যান্ডারস-এর এক হিসেব অনুযায়ী ১১৫টি সুনির্দিষ্ট আইন) ফৌজদারি, দেওয়ানি, সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক, আন্তর্জাতিক আইন, বিধান নিয়মকানুন, প্রথাপদ্ধতি প্রণয়ন করেন। কিন্তু আইন-প্রণয়নই এই সংলাপটির মূল বিষয় নয়; আরও গভীরে এটি যেসব বিষয়ের আলোচনায় নিয়োজিত হয় তা হলো; রাষ্ট্র কী, রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য কী, শাসন করার অধিকর কার, এর সুষ্ঠু বিন্যাস কী, এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক কী, রাষ্ট্রকে কী করে স্থায়িত্ব দেওয়া যাবে, ইত্যাদি। প্লেটোর রাজনৈতিক দর্শনে যেসব বিষয় ও প্রত্যয় গুরুত্বপূর্ণ তার সবই আলোচিত হয়েছে সংলাপটিতে।
এর সাথে তুলনীয় প্লেটোর অন্য সংলাপটি হচ্ছে রিপাবলিক, যার পরিচিতি ও খ্যাতি জগৎজোড়া। সেই সংলাপটিতে প্লেটো দার্শনিক-রাজার, তাঁর প্রজ্ঞার শাসন—যা রাজতন্ত্র বলে পরিচিত—তা সুপারিশ করেন। কিন্তু আইনকানুন-এ প্লেটো আইনের শাসনকে সর্বোত্তম শাসন হিসেবে বিবেচনা করে কতিপয় বিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তি কর্তৃক রাষ্ট্রশাসনের সুপারিশ করেন। তিনি তাকে বলেন ‘রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রে মধ্যপথ’; তাকে আবার অ্যারিস্টটল বলেছেন ‘গোষ্ঠীশাসনের প্রবণতাসম্পন্ন গণতন্ত্র’। এটি প্রথম পর্ব থেকে প্লেটোর রাজনৈতিক দর্শনের পরিবর্তনই বটে, যদিও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য যে নাগরিকদে সদ্গুণে প্রবুদ্ধকরণ আর ন্যায়নৈতিকতার সাথে সুখের যে সহসম্পর্ক বিদ্যমান, সেই প্রত্যয় উপস্থাপন থেকে পিছপা হননি তিনি। কল্পরাজ্য হিসেবে রিপাবলিক-এর কাল্লিপলিস (সুন্দর নগরী) প্রিয় বটে, কিন্তু বলা চলে, আইনকানুন-এ অংকিত ক্রিটের ম্যাগ্নেশিয়া নগরী অধিকতর বাস্তবানুগ। পৃথিবী এখন আর দার্শনিক-রাজার সন্ধান করে না, আইন শাসন্ তার আরাধ্য; তাই আইনকানুন পাঠ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।