বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাঙ্গেয় বদ্বীপের বড় একটি অংশ নিয়ে গঠিত। হাজার হাজার বছর ব্যাপী গঙ্গা বাহিত লক্ষ লক্ষ টন পলি, কাদা ও বালি দ্বারা গঠিত দিগন্ত বিস্তৃত উর্বর এই শ্যামল ভূমি।
আবহমান কাল থেকে এদেশের কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনেরা আমাদের প্রিয় পিতৃভূমিকে সুজলা-সুফলা কাননময় সবুজ শান্তির নীড়রূপে তুলে ধরেছেন। গঙ্গাঁ ও পদ্মা কেন্দ্রীক জীবন ব্যবস্থা নানা বৈচিত্রে ভরপুর। গঙ্গাঁ অববাহিকার মানব বসতি, জীব বৈচিত্র, পুরাতাত্ত্বিক ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ইত্যাদির সাথে পৃথিবীর অন্য কোন নদী অববাহিকার তুলনা চলে না। গঙ্গাঁ-পদ্মার দু্ই কূলে গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদগুলোতে দেখা যাবে বহু ভাষা ভাষী মানব গোষ্ঠীর লোকজন নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন। এইনদীর তীরে গড়ে ওা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগর বন্দরের সংখ্যা পৃথিীর যে কোন নদ-নদীর চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের গঙ্গাঁ-পদ্মা নিয়ে গ্রন।থরচিত হয়েছে খুব অল্প সংখ্যক। তবে গঙ্গা ও পদ্মা নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়েছে বিস্তর। পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে অসংখ্য। এর গতি প্রকৃতি এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে পৌরাণিক বিষয়, ভৌগোলিক বর্ণনা মূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।
গঙ্গা-পদ্মা সামান্য মাত্র কয়েকটি বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর তীরে গড়ে ওঠা প্রাচীন নগর বন্দরগুলোর বর্ণণা, এখানে নির্মিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের পরিচয়, এ অববাহিকায় বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। গঙ্গার দূষণ ও এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনেক উপস্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাচীন ও হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে। গঙ্গা ও পদ্মার অসংখ্য শাখা ও উপ-ন নদী নিয়ে বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে এই বইটিতে। পদ্মার এমন অনেক শাখা নদ-নদী রয়েছে, যেগুলো এতোকাল আমাদের কাছে ছিল একরূপ অজানা এবং অজ্ঞাত। কোন পাঠ্যপুস্তকে কিংবা মানচিত্রে এই প্রবাহগুলো উপস্থাপিত হয়নি। বর্তমান গ্রন্থটিতে এরূপ একাধিক নদ নদীর পরিচয় মিলবে।
গঙ্গা-পদ্মা সংশ্লিষ্ট অনেক অজানা তথ্য গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে যত্নের সাথে।