ব্রহ্মদেশ বেঙ্গলা, বেঙ্গল, বঙ্গাল, বঙ্গ, পূর্ববাংলা, পূর্ব পাকিস্তান—এসব নামে অতীতে যে এলাকা বোঝানো হতো তা বর্তমান বাংলাদেশেরই ভূখণ্ড। এসব জনপদের মধ্যে ছিলো গৌড়, বঙ্গ, সমতট, হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ, বঙ্গালম পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, রাঢ়, তাম্রলিপ্ত, বরাক ইত্যাদি। বিভিন্ন সময়ে এসব এলাকার ভৌগোলিক সীমারেখার পরিবর্তন হয়েছে—কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। জীবন ধারার পরিবর্তন হয়েছে; ধর্মীয় চিন্তাধারারও পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। পাল ও সেন রাজাদের আমালের জীবনধারা মুসলিম আমলে সমৃদ্ধ হয়; ব্রিটিশ আমলে এই জীবনধারার আমূল পরিবর্তন হয়। মানুষের সামাজিক সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটে—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তাধারায়ও এর প্রভাব পড়ে।
ব্রিটিশ যুগে এদেশের মানুষের মনে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার চেতনা পরিব্যাপ্ত হয় এবং পরিশেষে উপমহাদেশের বিভক্তিতে সৃষ্টি হয় ভারতও পাকিস্তান রাষ্ট্রের। অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্য পাকিস্তানের পূর্বাংশের জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে এবং এর পরিণতিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়। এ এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাজধানী স্থাপিত হলেও ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পায় মোগল আমলে। সুবেদার ইসলাম খান ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী করেন—পরে তা স্থানান্তরিত হয় মুর্শিদাবাদে। ব্রিটিশ আমলে বঙ্গভঙ্গের ফলে ১৯০৫ সালে ঢাকা আবার প্রাদেশিক রাজধানী হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর ঢাকা আবার জেলা শহরে রূপান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের বা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয় ঢাকা। ঢাকা ফিরে পায় প্রাদেশিক রাজধানীর পূর্বমর্যাদা। ১৯৭১ সালে ঢাকা হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজধানী।
মোগল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এদেশের মানুষের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঢাকাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং গভর্নরের অফিস ও বাসভবন পরিচিতি পায় লাটভবন, গভর্নমেন্ট হাউজ বা গভর্নর হাউজ নামে এবং তা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সবার দৃষ্টিতে আসে। বাংলাদেশ আমলে ওই গভর্নর হাউজ হয় বঙ্গভবন, রাষ্ট্রপতির অফিস ও বাসভবন। এই বঙ্গভবন হয়েছে কখনও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, কখনও সাংবিধানিক শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার। পাল আমলের রাজভবন থেকে বর্তমান আমলের বঙ্গভবন। রাজনৈতিক উত্থান-পতনের এক সুদীর্ঘ ইতিহাসের স্মারক। সংক্ষিপ্ত আকারে এই ইতিহাসই এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু।