বাংলাদেশের লোকসাহিত্যে বাউল সংগীতের ধারা বিশিষ্টতায় ও ব্যাপকতায় একটি স্বতন্ত্র সাহিত্য-প্রবাহ। জীবনের বাস্তব তথ্যকে নয়, তত্ত্বকেই সম্বর করে এই সাহিত্যের উন্মেষ ও বিকাশ। তত্ত্ব হলেও এই সাহিত্যের সংগীতাশ্রয়ী সুর এবং ভাবকে অবলম্বন করে তার সামগ্রিক যাত্রাপথ নির্মিত হয়েছে। বাউল সংগীতে শিল্পের সন্ধান না করলে আমরা সর্বত্রই যে সার্থক সাহিত্য শিল্পের সাক্ষাৎ পাই তা নয়—খুব কম সংখ্যক সংগীত ছাড়া প্রায় সব বাউল সংগীতেই তত্ত্বের প্রাবল্যে শিল্প ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু তবু এগুলো সাহিত্য এবং শিল্প, সে সাহিত্য মৌলিক ঐতিহ্যে নির্ভরশীল, সে শিল্প মুখে মুখেই রূপায়িত ও ঝংকৃত—ইংরেজীতে যাকে বলে ‘Oral Tradition’ তাই হোল এই সাহিত্যের মূল অবলম্বন। অথবা এই সংগীতগুলোকে বলা যায় মৌখিক শিল্প বা ‘Verbat Art’। মুখে মুখেই এই গানগুলোর সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রসার। পূর্ব পুরুষ থেকে পরবর্তী পুরুষে সঞ্চারিত। এ-কারণেই এই সংগীত-প্রবাহ লোক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এই সংগীত-সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্যে যেমন পরিচতি এবং প্রতিষ্ঠিত করেন, তেমনি বিশ্বের সুধী সমাজের দৃষ্টিকেও এই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বাংগালী প্রাণে এক গভীর জিজ্ঞাসা তত্ত্বের সুরে এই সংগীত-সাহিত্যে বাণীরূপ লাভ করেছে। কবিগুরু সেই বাণীর স্বরূপ হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পারে লালিত মানব-হৃদয়ের সকল ক্রন্দন, গীতপ্রবণ বাংগালী প্রাণের সকল জিজ্ঞাসাই কবিগুরুর সাহিত্যে প্রতিবিম্বিত—সেখানে বাউলের একতারাও একটি সুনিশ্চিত আসন ছিল। এই সাহিত্য বিচারে কবিগুরু যথার্থই বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাস প্রয়োজনের মধ্যে নয়, মানুষের অন্তরেতর গভীর সত্যের মধ্যে মিলনের সাধনাকে বহন করে এসেছে। বাউল সাহিত্যের বাউল সম্প্রদায়ের সেই সাধনা দেখি।‘ বাংগালীর আধ্যাত্ম সাধনার স্বরূপটি লিখিত সাহিত্যের মধ্যে বাউল সংগীত সার্থকভাবে বিধৃত হয়েছে। আধ্যত্ম সাধনার স্পর্শে সঞ্জীবিত বলেই এইসব সাহিত্যে ধর্মনিরপেক্ষ বাংগালীকে তথা সত্যিকার মানুষকে দেখবার একটি মহান প্রয়াস বিদ্যামান।
বাউল সম্প্রদায়কে ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে বিচারের প্রবণতা আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু আমার নিকট মনে হয়েছে যে, ধর্ম-সম্প্রদায় হিসাবে বাউরের যেমন একটি পরিচয় আছে, তেমনি তার চেয়েও তাঁদের বড় পরিচয় সংগীত-সম্প্রদায় হিসাবে। বরঞ্চ শেষোক্ত পরিচয়ের ভিত্তিতেই তাঁদের সম্প্রদায় বংগ সমাজে অধিক প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার লাভ করেছে। এ-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে এবং আশার কথা এই যে, আমাদের পণ্ডিত সমাজ এ-ব্যাপারে প্রশংসনীয় উদ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ইতিমধ্যে বাউল গান, বাউল কবি এবং বাউল সাধনা সম্পর্কে কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
ডক্টর আহমদ শরীফ লিখিত বর্তমান গ্রন্থ নিঃসন্দেহে এরূপ গ্রন্থ-তালিকায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করবে। সুফী সাধনা সম্পর্কেস ডক্টর আহমদ শরীফ আমাদের সমাজ একজন পণ্ডিত ব্যক্তি হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সুফী সাধনা সম্পর্কে তাঁর সুদীর্ঘ অধ্যয়ন ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে তাঁকে বাউলতত্ত্ব সম্পর্কেও উৎসাহিত করে থাকবে। বর্তমান গ্রন্থে তিনি যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে বাউলতত্ত্বের আদি উৎস থেকে শুরু করে বর্তমান স্তর পর্যন্ত তত্ত্বটির ঐতিহাসিক পটভূমিকা ও সামগ্রিক ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। তাঁর সে চেষ্টা বহুলাংশে সফল হয়েছে।
গ্রন্থটি পাঠকের সমাদর লাভ করলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
মযহারুল ইসলাম
Book Author | আহমদ শরীফ |
---|---|
Publisher | পড়ুয়া |
Cover Designer | আনওয়ার ফারুক |
Subject | ভ্রমণ/পর্যটন |
Language | বাংলা |
First Edition | ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ |
Book Size | ৫.৭৫ x ৮.৭৫ |
No. of pages | ১২৮+১৬ |
Price: Hardbound | ৩০০.০০ |
ISBN | 978 984 90705 1 1 |
Available | Yes |
Dimension (L x W x H) | 0 x 0 x 0 |
Weight | 0 |