SKU
53860026
কার্ল মার্ক্সের মহাগ্রন্থ ‘পুঁজি’-র পরই অর্থনৈতিক সাহিত্যে স্থান দেওয়া হয় যে গ্রন্থটিকে সেটি হলো মহামতি লেনিনের ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’। মহাকাব্যতুল্য এই গ্রন্থটি লেনিন রচনা করেন রুশ ভাষায়, যা প্রকাশিত ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দে। বাংলা ভাষায় এটা প্রথম অনুবাদ হয় মস্কোতে নয়, হয় পশ্চিম বাংলার কোলকাতায়। এবার ঢাকায় হলো এটার দ্বিতীয় অনুবাদ, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বপ্রথম। কারণ, তা সম্পন্ন হলো স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে।
রাশিয়ার সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং, ফলস্বরূপ, তার শ্রেণীকাঠামোর যে বিশ্লেষণ এই গ্রন্থে হাজির করা হয়েছে অর্থনৈতিক অনুসন্ধান ও পরিসংখ্যানের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তা এখন দৃঢ়ভাবে প্রতিপাদিত হয়েছে বিপ্লবের গতিধারার সকল শ্রেণীর প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যকলাপের দ্বারা। প্রলেতারিয়েতের অগ্রণী ভূমিকা এখন উদ্ঘাটিত হয়েছে সম্পূর্ণরূপে। এটাও উদ্ঘাটিত হয়েছে যে, ইতিহাস চলমান প্রক্রিয়ায় প্রলেতারিয়েতের শক্তি সমগ্র জনসংখ্যার মধ্যে তার অংশের তুলনায় অপরিমেয়ভাবে বিশাল।
প্রতিবিপ্লবী বুর্জোয়া ও বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের মধ্যে হতদরিদ্র ক্ষুদে মালিকের দোদুল্যমানতা প্রতিটি পুঁজিবাদী সমাজে বিদ্যমান ঘটনার মতোই অবশ্যম্ভাবী, যেখানে ক্ষুদে উৎপাদকদের নগন্য সংখ্যালঘিষ্ঠ একটি অংশ ধনী হয়ে উঠে, “দুনিয়ার সদম্ভে বিচরণ করে,” বুর্জোয়ায় পরিণত হয়, পক্ষান্তরে সুবিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠরা হয়তোবা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে পরিণত হয় মজুরিশ্রমিক অথবা নিঃস্ব ভিখারীতে, কিংবা প্রায়-পলেতারীয় অস্তিত্ব বয়ে নিয়ে চলে অনন্তকালব্যাপী। কৃষকসমাজের মধ্যে এই উভয়বিধ ঝোঁকের অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রকটিত হয়েছে বর্তমান এ গ্রন্থটিতে।
যতোদিন না রচিত হচ্ছে ভারতবর্ষে পুঁজির বিকাশ, কিংবা বাংলাদেশের জন্য তদ্রুপ কোন মহাকাব্য ততোদিন বাংলাভাষী পাঠক কাজ চালিয়ে নিতে পারেন রুশীয় গ্রাম-গঞ্জ-শহরের বদলে নিজের গ্রাম-গঞ্জ-শহরের নাম বসিয়ে… ঢাকা কোলকাতাকে বসিয়ে নিতে পারেন মস্কো কিংবা পিটার্সবার্গের বদলে। রুশীয় কৃষকসমাজ ও শ্রমিকশ্রেণীর আয়নায় দেখে নিতে পারেন নিজের কৃষকসমাজ ও শ্রমিক শ্রেণীর আদলটা… আর তাই যদি পারেন তবে সমাজবিপ্লবের পক্ষে সাধ্য কি ঐতিহাসিকভাবে অনিবার্য না হয়ে উঠার…। ততোদিনে অবশ্যই সংগঠিত হয়ে উঠবে তাদের নিজ নিজ শ্রেণী… আর তাদেরকে সংগঠিত করার সেই দায়িত্বটাই রয়ে গেছে কমিউনিস্টদের কাঁধে।… শ্রমিকের হারাবার কিছুই নেই শুধু শৃঙ্খলাটা ছাড়া।